বিএনপির সাথে দরকষাকষিতে খালেজা জিয়ার মামলা!
- জাকির হোসেন লিটন
- ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:১৭
জাতীয় নির্বাচনের পর এবার বিএনপিকে সংসদেও চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে নানামুখী চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির ওপর প্রকাশ্যে এবং পর্দার অন্তরালে নানা চাপ তৈরি করা হচ্ছে। গণভবনে প্রদানমন্ত্রীর চায়ের দাওয়াত এবং গণফোরামের দুই এমপি সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়টিও সরকারের সেই কৌশলের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। নিজ দলের এমপিদের সংসদে ফেরাতে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলোকেও কাজে লাগানো হতে পারে। লক্ষ্য অর্জনে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে চলমান বিভিন্ন মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, বিএনপিজোটের বর্জনের মুখে ‘১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল সরকার। বিতর্ক এড়াতে বিএনপি জোটকে সাথে নিয়ে আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ ছিল সরকারের ওপর। সেজন্য এবারের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তৎপর ছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। সংলাপ আয়োজন, রাজনৈতিক মামলা তুলে নেয়া এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ নানা প্রতিশ্রুতির পর শেষ পর্যন্ত এবারের নির্বাচনে অংশ নেয় সরকারবিরোধী জোট। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং সুষ্ঠু ভোট নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও বিএনপিজোটের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। সেজন্য সংখ্যায় নগণ্য হলেও কার্যকর সংসদ দেখাতে এবার বিএনপিজোটের নির্বাচিত এমপিদের জাতীয় সংসদেও আনতে চান তারা। সেই লক্ষ্যে নানা কৌশলে এগোচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংসদে ফেরাতে শুরুতেই গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বের হোসেনকে টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে সুলতান মনসুর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ইতোমধ্যে তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, দল থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়নি এবং তিনিও দলত্যাগ করেননি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। এই দুই এমপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং গণফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে অনড়। তাদের দুইজনের যোগ দেয়াকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্ট ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বিরোধী জোটে ভাঙন হলে বিএনপিও চাপের মুখে পড়তে পারে। এতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় এমপিও সংসদে যোগ দিতে পারে বলে ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন।
সূত্রগুলো আরো জানায়, বিএনপির এমপিদের সংসদে ফেরাতে নানামাধ্যমে যোগাযোগ করছে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাধ্যমগুলো। এক্ষেত্রে দলের বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও এমপিদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সংসদে যোগ দেয়ার নানা ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হচ্ছে তাদের সামনে। এ ছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সাথেও কূটনৈতিকসহ নানামাধ্যমে সংসদে যোগ দেয়ার তদবির করা হচ্ছে।
সরকারের একটি সূত্র জানায়, সংসদে ফেরাতে বিএনপির ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাকেও ইস্যু করা হতে পারে। বিএনপি সংসদে যোগ দেয়ার শর্তে শেষ পর্যন্ত তার জামিনও দেয়া হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজি না হলে নির্বাচিত এমপিরাসহ দলের নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রশাসনিক চাপও তৈরি করা হতে পারে। তাদের ঘিরে দুর্নীতি দমন কমিশনও নতুনভাবে তৎপরতা শুরু করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকপর্যায়ের তিন নেতা আলাপকালে বলেন, বিএনপিকে সংসদে আনতে স্বাভাবিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের সংসদে যোগ দিতে বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে। নির্বাচনে তিক্ততার রেশ কাটাতে ইতোমধ্যে তাদের গণভবনে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। এর আগে তারা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে এসেছিল। সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেও বাধ্য হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সংসদে যোগ না দিয়েও আর পার পাবে না। সময়মতো তারা সংসদে ফিরতে বাধ্য হবে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গতকাল বলেছেন, বিএনপি গণভবনে চায়ের দাওয়াতে না গেলেও সংসদে যাবে। সংসদে না গেলে তাদের রাজনীতি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপিকে সংসদে আনতে নানামুখী চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, তারা একটি বড় দল। আমরা চাই তারা সংসদে আসুক। সংসদে এসে গঠনমূলক সমালোচনা করুক। ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের দু’জন এসেছেন। বাকিরা যে আসবেন না তা বলা যাবে না। দেখা যাক কতজন আসেন।’
তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন অনেক দল আছে যারা কম আসন পেয়েও সংসদকে চাঙ্গা রাখছে। দল ছোট বা বড় বিষয় নয়। নানা প্রতিকূলতা থাকতেই পারে। দল যত ছোটই হোক সংসদে এসে তাদের গঠনমূলক আলোচনা করতে হবে। শুধু সংসদে কেন সংসদের বাইরেও তারা সমালোচনা করতে পারে।’